খোলা ডেস্কঃ
হাতে কলম। মাথা নামিয়ে হাঁটছিলাম ফুটপাত ধরে। সে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে পথ আটকে দাঁড়িয়ে,
– “ভালো আছো?”
আমি মাথা নাড়ালাম বরাবরের মতোই।
সে রাস্তা ছেড়ে, পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলছিল,
– “বেশ।”
আমি তাকে পেছনে ফেলে হাঁটলাম। দু ‘পা এগিয়ে ভাবছিলাম অনেকটা রাস্তা এগিয়েছি। ঠিক এমনি সময় পেছন থেকে তার গলা,
– “এখনও তুমি খোঁপা করো?!”
আমি পেছন ফিরে চাওয়ার আগেই, ঝাপসা হয়ে বৃষ্টি নামল। দৌড়ে এলাম পথটুকু। ঝড়ের ঝাপটায় খোঁপা তখন আলগা, চুলের থোকা নেমে গেছে কোমড় ছাড়িয়ে।
আজ তার সাথে আমার শেষবারের দেখা। স্টেশন চত্বরে। ভীষণ ঝড়ে আটকে পড়েছে ট্রেন। প্ল্যাটফর্ম চত্বরে আটকে মানুষের ব্যস্ততা।
তোমার হাতে বড়ো ট্রলিব্যাগ -ব্রিজ থেকে নেমে আসছো, মাথা উঁচু, শিরদাঁড়া সোজা।
সিঁড়ির শেষধাপে পা রেখে থমকে বললে,
– “ট্রেন বন্ধ?”
আমি ট্রলিব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললেম,
– “তার ছিঁড়েছে পরের স্টেশনে।”
তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বললে,
– “পুনে চললাম। আমার জীবনের তার জোড়া দিতে। চাকরিটা হল শেষমেষ।”
আমি নির্লজ্জের মতন বলে উঠলেম,
– “সত্যিই সব জুড়লে? ছিঁড়ল না কিছু? জট পাকালো না?”
আরো জোরে বৃষ্টি নেমেছে। হাওয়ার দাপটে শাড়ির আঁচল এলোমেলো, কাদা ছিটকে লেগেছে শাড়ির পাড়ে। আমি পেছন ফিরতেই তার গলা কানে এল,
– “আমি একদিন ফিরব। তাই আজ যাচ্ছি।”
আমি মুখ ফিরিয়েছিলাম তাকে চলে যেতে দেখব বলে। দেখতে পাই নি।
প্ল্যাটফর্মের টিনের চাল ভেঙে পড়েছে তার আর আমার মাঝ বরাবর। সবাই ব্যস্ত হয় পড়েছে ছুটোছুটিতে।
সে বোধহয় হেঁটে গেছে অনেকক্ষণ।
আমি ভাঙা টিনের চালের দিকে তাকিয়ে বললেম,
– “অনিমেষ, তুমি বরং ঝড় হয়েই ফিরে এসো।”
ছোটো গল্পটি লিখেছেন রাফি আহমেদ উল্লাস। তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর।
Discussion about this post