খেলার শুরু থেকেই প্রচণ্ড উত্তেজনা, সমর্থকদের চিৎকার আর হইচইয়ে কান পাতা দায়। প্রথম ১০ মিনিটে জার্মানি দলের ধারালো সব আক্রমণের পরই হঠাৎ নীরবতা। পর্তুগাল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোলে এগিয়ে গেল। এরপরই জেগে উঠল জার্মান ফুটবলের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ইতিহাস। আর এই ইতিহাস গড়ার নায়ক ছিলেন জার্মান ফুটবলে আগন্তুক রবিন গোসেনস।
রবিন গোসেনস জার্মান ফুটবল লিগ বা বুন্দেসলিগাতে কখনো খেলেননি। চার বছর ধরে খেলেছেন ইতালির ফুটবল লিগে আতালান্তা বের্গামোর হয়ে। তাঁকে নিয়ে জার্মানিতে গত সন্ধ্যার আগপর্যন্ত কোনো উচ্ছ্বাস বা আলোচনা ছিল না। সেই অপরিচিত রবিন গোসেনসই মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা স্টেডিয়ামের সব আলো কেড়ে নিলেন।
গোসেনস পর্তুগালের বিরুদ্ধে নিজে একটি গোল করেছেন এবং দুটি গোল বানিয়ে দিয়েছেন। গতকালের পর আজও জার্মানির পত্রপত্রিকার শিরোনামে রবিন গোসেনসেরই আধিপত্য।
ডার স্পিগেল পত্রিকা লিখেছে, এবারের ইউরোর প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে আত্মঘাতী গোলে হারার পর জার্মানি দলের কোচ ইওয়াখিম ল্যুভকে দলের পুনর্বিন্যাস নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেদি আর আত্মবিশ্বাসী ল্যুভ তা কানে তোলেননি। পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি জার্মান দল সাজালেন নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই। খেলা শেষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে গোসেনস বলেছেন, ‘আমি আমার কোচের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ, যিনি ফুটবলভূমিতে আমাকে ছোট্ট একটি কুঠি নির্মাণে সহায়তা করেছেন।’
গিভ মি স্পোর্টস নামের একটি অনলাইন পত্রিকা জানিয়েছে, ইতালির ফুটবল লিগে আতালান্তার হয়ে খেলা গোসেনস গত এপ্রিলে পর্তুগালের তারকা রোনালদোর সঙ্গে জার্সি বিনিময় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রোনালদো নাকি আরেক দিকে তাকিয়েই না করে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় খুব বিব্রত হয়েছিলেন গোসেনস। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় রবিন গোসেনস হারিয়ে দিয়েছেন সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেই, জিতে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও।
জার্মানির জয়ের পর চারদিকে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, অনেক দিন পর আবার দেখা গেল চমৎকার ফুটবলের ঝলকানি। বর্তমান ইউরো চাম্পিয়ন পর্তুগালকে হারানো যে সহজ কাজ ছিল না, সে তো সবারই জানা ছিল। সে কাজই করে দেখিয়েছে জার্মান দল। এই জয় জার্মানির মানুষকেও দেখাচ্ছে একটা আশার ঝলক—তবে কি জার্মান ফুটবল আবার ঘুরে দাঁড়াল!
Discussion about this post