বৃহত্তর চীনের প্রতিটি রাজ্যের রয়েছে নিজস্ব ডাম্পলিং। চীনারা বিভিন্ন রকমের পুর দিয়ে ডাম্পলিং বানায় এবং প্রতিটি পুরের রয়েছে আলাদা অর্থ। যেমন ভালো ভাগ্যের জন্য বকচয়, সুখী জীবনের জন্য গরুর মাংস এবং অর্থ–সম্পদের জন্য মাশরুম ও মাছের পুর।

এর রেসিপি পাওয়া যায় এপিসিয়াসে একটি প্রাচীন রোমান রান্নার বইয়ে। আর ‘ডাম্পলিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৭ শতকে, একটি ইংরেজি বইয়ে। ঝংজিং ঠান্ডার ওষুধ হিসেবে ডাম্পলিংয়ের উদ্ভব হলেও অনেক দেশে এটি বানানো হতো ভিন্ন কারণে—মাংস সংরক্ষণে ও বাড়তি শস্য কাজে লাগাতে।
নানা ঢঙের ডাম্পলিং

আগেই বলেছি, চীনে পাওয়া যায় হরেক রকমের ডাম্পলিং। এর ভেতর আছে হার গাও। এটি বানানো হয় চিংড়ি মাছ দিয়ে। শু মাই নামের ডাম্পলিং বানানো হয় চিংড়ি ও শুয়োরের মাংসের কিমা দিয়ে। একে গারনিশ করতে ওপরে দেওয়া হয় কমলা রঙের কাঁকড়ার ডিম। চীনের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া যায় জিয়াও জি। এটি পরিবেশন করা হয় ভিনেগার ও সস দিয়ে।

রন্ধনপদ্ধতি, আকার ও পুরের ভিত্তিতে একে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। শুই জিয়াও বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির—এর ভেতর থাকে শুয়োরের মাংসের কিমা ও নাপা বাঁধাকপি। এটি পানিতে সেদ্ধ করে বানানো হয়। গিও টি—একে জিয়ান জিয়াও বলা হয়। এই প্যান-ফ্রায়েড ডাম্পলিংয়ে শুয়োরের মাংসের কিমার সঙ্গে থাকে চায়নিজ চাইভ। ঝেং জিয়াও আকারে ছোট্ট ও স্বচ্ছ। ভেতরে থাকে চিংড়ি মাছের পুর। এগুলোর বাইরে সবচেয়ে জনপ্রিয় চায়নিজ ডাম্পলিং হলো শিয়াও লং বাও। এটি খুব বিচিত্র ধরনের স্যুপ ডাম্পলিং। এটির জন্ম সাংহাইয়ে। এর আকার মোটামুটি বড় আর ভেতরে থাকে কিউব আকারে জেলাটিনের মতো ঘন ঝোলের পুর। এটি ঘরোয়া তাপমাত্রায় জমে থাকে। তাপে গলে গিয়ে স্যুপ হয়।
গিয়োজা জাপানিজ ডাম্পলিং, যার সঙ্গে আছে চীনা গিও টি ডাম্পলিংয়ের অনেক মিল। এটি প্যান-ফ্রায়েড, পুর হিসেবে থাকে শুয়োরের মাংসের কিমা ও বাঁধাকপি। এটিকে রামেন ও ইজাকায়া রেস্টুরেন্টে অ্যাপিটাইজার হিসেবে সার্ভ করা হয়, সঙ্গে থাকে সয়া সস ও ভিনেগারমিশ্রিত ডিপিং সস।

কোরিয়ান ডাম্পলিংয়ের নাম মান্ডু। চার রকমের আছে—ভাজা, সেদ্ধ, ভাপা ও স্যুপ। টফু, শুয়োরের মাংসের কিমা, সবজি ও চিংড়ির পুর দিয়ে বানানো হয় মান্ডু। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত কিমচির পুর।

পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, তুরস্ক ইত্যাদি দেশের মূল খাবার হচ্ছে মান্টি বা মান্টু। এর শুরু মঙ্গোলদের রাজত্বকালে। মঙ্গোল আর তুর্কিদের হাত ধরে সিল্ক রোডের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া ও বলকান অঞ্চলে। এটি বানানো হয় গরু, ভেড়া, খাসি, কখনো কখনো ঘোড়ার মাংসের কিমা দিয়ে। এর সঙ্গে মেশানো হয় অনেক পেঁয়াজ ও বিভিন্ন রকমের মসলা। দেশভেদে মান্টির পুর যেমন হয় ভিন্ন, তেমন সসও হয় ভিন্ন। যেমন আফগানিস্তানে এর ওপর টমেটো সস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, তুরস্কে মান্টি খায় টক দই, রসুন, মাখন ও প্যাপরিকার গুঁড়ায় বানানো সস দিয়ে।
নেপালি বা তিব্বতি মোমো আমাদের সবার পরিচিত। সেখানে অলিগলিতে মোমোর দোকান। এর ভেতরে থাকে মুরগি বা সবজির পুর আর খেতে হয় টমেটোর চাটনি দিয়ে। সাধারণভাবে ভাপিয়ে বা ভেজে বানানো হয়। তবে এখন তন্দুরি ও কারি মোমোও পাওয়া যাচ্ছে।

বাহন বত লক ভিয়েতনামিজ ডাম্পলিং। এটি বানাতে লাগে ট্যাপিওকার ময়দা আর ভেতরে ভরা হয় শুয়োরের মাংসের কিমা ও চিংড়ি। এরপর একে পানিতে সেদ্ধ করা হয়, নয়তো কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাপানো হয়। ট্যাপিওকা ময়দার জন্য এটি দেখতে হয় স্বচ্ছ।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো