ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হুমকির পর ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরে বসবাসরত বাসিন্দারা বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন। কেউ যানবাহনে আবার কেউ বা সড়ক দিয়ে হেঁটেই ‘অজানা গন্তব্যে’ যাচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর গাজার ১১ লাখ মানুষকে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তর করতে বৃহস্পতিবার হুমকি দেয় ইসরায়েল, এরপর শুক্রবার ওই এলাকার বাসিন্দারা রওনা হন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদন বলছে, বহু মানুষকে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা গেছে। পরিবারের স্বজনদের নিয়ে ছুটছেন তারা। এদের অর্ধেকের বয়সই ১৮ বছরের নিচে।
বিবিসির প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, সড়কে শত শত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং ট্রাক দেখেছেন তারা। এসবে ভারী জিনিসপত্র বোঝাই। মানুষ গরু, উট, ভেড়া, গাধা নিয়ে যাতায়াত করছে। অনেক পরিবার হেঁটেই যাচ্ছে, তাদের কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে।
এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় গাজার বাসিন্দাদের সরানোর বার্তা দেয় ইসরায়েল।ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের ওয়াদি গাজার উত্তরে বসবাসরত ১১ লাখ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় স্থানান্তর করতে নির্দেশনা দেয় তখন।
জাতিসংঘ জানায়, ইসরায়েল যতসংখ্যক মানুষকে সরানোর কথা বলেছে, সে সংখ্যাটি গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছাড়া এ ধরনের স্থানান্তর অসম্ভব বলে মনে করে জাতিসংঘ।’
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি টম বেটম্যানে মতে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১১ লাখ মানুষের বাড়িঘর ছেড়ে দেয়া অসম্ভব। এর অর্থ হলো প্রতি ঘণ্টায় ৪০ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে।
টম বেটম্যান বলেন, জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের জায়গা ফাঁকা করার আদেশের আওতায় রয়েছে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরতরাও। এ কারণেই জাতিসংঘ ইসরায়েলকে এ ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বলেছে। জাতিসংঘ বলেছে, এ ধরনের স্থানান্তর বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এদিকে গাজার বাসিন্দাদের ঘর না ছাড়ার তাগিদ দিয়েছে হামাস। উপত্যকার শাসক দলটির শরণার্থীবিষয়ক কর্তৃপক্ষ উত্তর গাজার বাসিন্দাদের দখলদার বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মুখে বাড়িতে অবিচল থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় গাজায় কমপক্ষে এক হাজার ৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ছয় হাজার ৬১২ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। তারা গাজা সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক সেনা, ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও কামান মোতায়েন করেছে। গাজায় পানি, খাবার, জ্বালানি, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।